কলমকথা ডেস্ক:
আমরা বাঙালি জাতি খাওয়া দাওয়া করায় যেমন পটু ঠিক নিজেদেরকে নানা রঙে ঢঙে নিজেকে অপরের সামনে উপস্থাপন করতেও পিছপা হয়না কিন্তু।তার মধ্যে নিজেকে পরিপাটি করতে অন্যতম একটা শিল্প হলে নিজেকে গাঢ় মেহেদীর রঙে রাঙিয়ে তোলা।
কিন্তু এই ডিজিটাল যুগে খুবই স্বল্প সময়েই যে কোনো ভাবেই নিজেকে রঙিন করে তুলতে আমরা বেছে নিচ্ছে নানা রকম ভেজাল ব্র্যান্ডের মেহেদী ,যেটা আমাদের বাহ্যিক ত্বকের জন্য খুবই মারাত্মক এমনকি এটাতে মৃত্যুর ঝুঁকিও রয়েছে অধিকাংশ ক্ষেত্রে।তাই মেহেদী নির্বাচনে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো অবশ্যই খেয়াল রাখা উচিৎ।
মেহেদীর রঞ্জকঃ মেহেদী পাতায় কমলা রং এর এক ধরণের রঞ্জক পদার্থ থাকে যাকে লসোন( Lawsone/Hennotannic acid ) বলে। একমাত্র ল্যাব টেষ্টেই নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব মেহেদীতে কোন কোন কেমিক্যাল মেশানো হয়েছে।
আসল মেহেদী চেনার উপায়ঃ
🟢 ১। খাঁটি মেহেদী কখনোই কালো রং এর হয়না।সকল কালো মেহেদীই ভেজাল বা কেমিক্যাল মিশ্রিত।
🟢 ২। প্রাকৃতিক মেহেদী কখনোই ৫মিনিটে গাঢ় টুকটুকে রং দেয়না।মেহেদীর রং হাতে ঢুকতে কয়েকঘন্টা সময় Mলাগে এবং পরবর্তী ২৪-৪৮ঘন্টায় তা অক্সিডাইজড (বাতাসের অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে) হয়ে গাঢ় রং হয়।
🟢 ৩। মেহেদীর রসের স্বাভাবিক রং ন্যাচারাল কমলা(CI-75480)।মেহেদী হাত দিয়ে ধরা মাত্রই যদি হাত লাল বা খয়েরী লাল হয়ে যায় না।
মেহেদীতে কী কী ভেজাল মেশানো হয়ঃ
🔴 ১। কার্বোলিক এসিডঃ এটা ফেনল বা সাপ তাড়ানোর ঔষধ হিসাবে বেশী পরিচিত। এটা ত্বকের কোষগুলোকে মেরে ফেলে এবং এর প্রতিরোধক ক্ষমতাকে ধ্বংস করে;ফলে মেহেদীর রং সহজেই ত্বকে প্রবেশ করে ও দ্রুত রং দেয়।
🔴 ২। পিপিডিঃ Para-Phenylene-Diamine এটা কালির রং।সকল কালো রং এর মেহেদীতে পিপিডি আছে। ন্যাচারাল মেহেদী কখনোই কালো রং এর হয়না। পিপিডি মারাত্মক অ্যালার্জি তৈরী করতে পারে।
🔴 ৩।রেড অক্সাইডঃএটা ফার্নিচারের রং করার কাজে ব্যবহৃত লালচে খয়েরী রং এর পাউডার।
🔴 ৪।ক্ষতিকর দ্রাবকঃ কেরোসিন, গ্যাসোলিন, তার্পিন তেল,কর্পুর… ইত্যাদি। এসব দ্রাবক মেহেদীর রঞ্জক লসোনের ঘনত্ব বাড়ায়,ফলে মেহেদীর রং গাঢ় হয়।
🔴 ৫।কেমিক্যাল ডাইঃ মেহেদীর রং গাঢ় ও দ্রুত করার জন্য কাল,লাল বা খয়েরী লাল রং এর ডাই ব্যবহার করা হচ্ছে।
এসব কেমিক্যালের ক্ষতিকর দিকগুলো কী কী?
👉 ১।ত্বকের অ্যালার্জিঃ এই ক্ষতিটা সবচেয়ে বেশী দেখা যায়।এতে ত্বক চুলকায়,লাল হয়,ফুলে উঠে,চামড়া উঠে যায় বা ফোস্কা পড়ে(contact dermatitis)। পরবর্তীতে ত্বকে কালো দাগ(post inflammatory hyperpigmentation) ও scarring হতে পারে।অনেক সময় তাৎক্ষণিক কোন সমস্যা না হলেও ১-৬ সপ্তাহ পরও সমস্যা হতে পারে(delayed hypersensitivity reaction)।এমনকি প্রথমবার লাগিয়ে কিছু না হলেও দ্বিতীয়বার লাগানোর পরে প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে (sensitization)।
👉 ২। ত্বক পুড়ে যাওয়াঃ ফেনল ত্বক পুড়িয়ে দিতে পারে।কম ঘনত্বের ফেনল ত্বক না পুড়ালেও ত্বকের কোষকে মেরে ফেলতে পারে।
👉 ৩। ফেনল, কেরোসিন, তারপিন, পিপিডি ইত্যাদি ত্বক থেকে দ্রুত শোষিত হয়ে সারাদেহে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষতঃ কিডনী ও লিভারের জন্য এরা মারাত্মক ক্ষতিকর।
👉 ৪। কর্পুরের ঘ্রাণ তাৎক্ষণিকভাবে শ্বাসতন্ত্রের ক্ষতি করে। বমিও হতে পারে।
👉 ৫। টেক্সটাইল ডাই ক্যান্সারসহ নানারকম অসুখ তৈরী করে বলে খাদ্য ও প্রসাধনীতে এর ব্যবহার নিষিদ্ধ।
👉 ৬। মৃত্যুঃ Anaphylactic reaction বা তীব্র মাত্রার অ্যালার্জি হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে মানুষ মারা য়েতে পারে।পিপিডির কারণে এভাবে রোগী মারা যাওয়ার ইতিহাস রয়েছে।
হাতে মেহেদী লাগানো একটা শৈল্পিকচর্চ্চা। ধৈর্য্ধারণ ও নির্ভেজাল হওয়া শিল্পচর্চ্চার পূর্ব শর্ত।আসুন আমরা তাজা মেহেদী হাতে লাগাই আর কেমিক্যালযুক্ত মেহেদী বর্জন করি।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।